লিচুর শহর ঈশ্বরদী এবং দর্শনীয় স্থান সমূহ
লিচু বাগান দেখতে সবাই দিনাজপুরে যায় । আমারও সেরকমই ইচ্ছা ছিলো ।
লিচু বাগান আগে কখনো দেখা হয় নি । তাই লিচু বাগান দেখতে যাওয়ার জন্য ফেসবুকে
স্ট্যাটাস দিলাম, “লিচু বাগান দেখতে কোথায় যাওয়া যায়?” ভার্সিটির এক ছোট ভাই বললো,
ভাই ঈশ্বরদী যান । অনেক লিচু বাগান আছে । আর সাথে অনেক কিছুই দেখতে পারবেন ।
ঈশ্বরদী উপজেলা হলেও এমন অনেক কিছু আছে যা অনেক জেলাতেও নেই ।
এইসব কথা শুনে ঘুরে আসলাম ঈশ্বরদী । আসলেই অনেক সুন্দর একটা শহর,
ছিমছাম, রাস্তায় যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা নেই । রাস্তাঘাটও অনেক সুন্দর । জ্যাম
নেই । অটো দিয়ে পুরো শহর ঘুরে দেখা যায় । খরচও অনেক কম ।
ঈশ্বরদী নেমে প্রথমেই গেলাম লালন শাহ সেতু আর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
দেখতে । ঈশ্বরদী বাজার থেকে লোকাল অটো বা সিএনজিতে করে রুপপুর মোড় । রুপপুর মোড়
থেকে লালন শাহ সেতু ১.৫ কিলোর মত । লালন শাহ সেতু আর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাশাপাশিই
অবস্থিত । হাঁটাহাঁটি অভ্যাস থাকায় হেঁটেই সেতুর দিকে গেলাম । সেতুর আগে টোল
প্লাজায় গিয়ে দেখি হেঁটে সেতু পার হওয়া যায় না । অগত্যা সিএনজি নিতে হলো । লোকাল
সিএনজি করে সেতু পার হলাম ১০ টাকা দিয়ে । বাইক বা গাড়ি দিয়ে গেলে সেতুর উপর
দাঁড়ানো যায় । লালন শাহ সেতু থেকে হাতের ডানেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখা যায় । মজার
ব্যাপার হচ্ছে সেতুর এই পারে পাবনা ওইপারে কুষ্টিয়া ।
লালন শাহ সেতু থেকে লোকাল অটো দিয়ে আবার পাবনা এসে গেলাম হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ দেখতে । ব্রিজের নিচে ও উপরে যাওয়া যায় । ব্রিজের নিচেই পদ্মা নদীর পাড় ।
নদীর বাতাস খেতে খেতে সময় কিভাবে কেটে যাবে খেয়ালও থাকবে না । চাইলে নৌকাতে করে
পদ্মার বুকেও ঘোরাঘুরি করা যায় । সেইক্ষেত্রে মাঝির সাথে দামাদামি করে নিতে হবে ।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপরে পাকশী স্টেশনে যাওয়া যায় কিন্তু ব্রিজের উপরে হাঁটা নিষেধ
। তবে লোক কম থাকলে মাস্টারকে কনভিন্স করতে পারলে হাঁটতে দেয় । সেটা মাস্টারে
মুডের উপর নির্ভর করে। বিনিময়ে খুশি করার জন্য কিছু টাকা দিতে হয় । হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ ১৯১৫ সালে চালু হয়েছে । সেই হিসেবে ১০১ বছর বয়স এই সেতুর !!! আমার ভাগ্য
ভালো ছিলো ব্রিজের উপর হাঁটাহাঁটি করার সময়ই ঢাকা-কলকাতা ট্রেন আসে । আমাদের সামনে
দিয়েই যায় । তখন ব্রিজ কাঁপতে থাকে !!!
লিচু বাগানের জন্য যেতে হবে জয় নগর । জয় নগর থেকে রুপপুর মোড়
পর্যন্ত হাতের ডান পাশে সবই লিচু বাগান । এজন্য যেকোন একটা অটোর সাথে রিজার্ভ
চুক্তি করে নিতে হবে । অটোওয়ালাই সব বাগান ঘুরিয়ে দেখাবে । লিচু বাগানে অনুমতি
নিয়ে ভিতরেও ঢোকা যাবে । শুধু লিচু না ছিড়লেই হলো । লিচু বাগান দেখতেও সুন্দর ।
অনেক গাছ লিচুর ভারে নুয়ে পড়ে । তখন বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয় । লিচু বাগান ২৪
ঘন্টা পাহারা দিতে হয় । দিনে ছাগল, মানুষের ভয় আর রাতে বাদুড় । বাদুড় লিচু খায়
একটা নষ্ট করে ১০ টা । লিচু গাছের উপরে কাকতাড়ুয়া বা অনেকে পলিথিন দিয়ে রাখে পাখি
তাড়ানোর জন্য । লিচু গাছের মজার ব্যাপার হলো কত শতাংশ(সঠিক মনে নেই) জায়গার মধ্যে
শুধু একটা লিচু গাছই থাকতে পারবে । লিচু বেশি দিন থাকে না । মে মাসেই শুধু লিচু
পাওয়া যায় । আমি ১৭ মে গিয়েছি তাতেই অনেক লিচু বাগানের লিচু পাড়া শেষ হয়ে গিয়েছে ।
এছাড়াও ডাল গবেষনা কেন্দ্র, ইক্ষু গবেষনা কেন্দ্র আছে দেখার মত ।
ঈশ্বরদী তে এয়ারপোর্টও আছে । এয়ারপোর্টের ভিতরে রানওয়ে পর্যন্ত যাওয়া যায় ।
খাওয়ার মত আছে প্যারা সন্দেশ । পোষ্ট অফিস মোড়ের পাবনা দই ঘরের
প্যারা সন্দেশ । ঈশ্বরদীর যেকোন জায়গা থেকে পোষ্ট অফিস মোড় বললেই অটো নিয়ে যাবে ।
ঈশ্বরদী একদিনের জন্য গেলে সাথে কুষ্টিয়ার লালনের আখড়াও দেখে আসা
সম্ভব । সারাদিন ঈশ্বরদী ঘুরে রুপপুর মোড় থেকে কুষ্টিয়ার গাড়িতে উঠে পড়লে ৪০ মিনিট
থেকে ১ ঘন্টার মত লাগে কুষ্টিয়া যেতে । কুষ্টিয়ার মজমপুর গেট থেকে লালনের আখড়া
যেতে ১০ টাকা লোকাল অটো ভাড়া । লালনের আখড়ায় সবসময়ই গান চলতে থাকে। বিকালে গেলে
কুলফি মালাই খেয়ে আসা যাবে । রাতে থাকে না । আমি পাই নাই । গান শুনে ঘুরাঘুরি করে
রাতের বাসে করে পরদিন সকাল ঢাকা ।
কিভাবে যাবেন :
বাস, ট্রেন দুইভাবেই যাওয়া যায় । পাঁচ ঘন্টার মত সময় লাগে ।
ট্রেনে গেলে,
ধূমকেতু(শনিবার বন্ধ) ছাড়ে সকাল ৬ টায়
সুন্দরবন(বুধবার বন্ধ) ছাড়ে সকাল ৬.২০ মিনিটে
সিরাজগঞ্জ(শনিবার বন্ধ) ছাড়ে বিকাল ৫ টায়
পদ্মা(মঙ্গলবার বন্ধ) ছাড়ে রাত ১১.১০ মিনিটে
সিল্কসিটি(রবিবার বন্ধ) ছাড়ে দুপুর ২.৪০ মিনিটে
চিত্রা (সোমবার বন্ধ) ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টায়
ভাড়া - শোভন- ২৪৫
বাসে গেলে,
পাবনা এক্সপ্রেস, ঈশ্বরদী এক্সপ্রেস
বিকাল ৩ টার পর আবার রাত ১০ টা ১১ টায় দুইটা বাস
আছে ঢাকায় আসার জন্য ।
ভাড়া - ৩৫০
কোথায় থাকবেন :
ঈশ্বরদী বাজারেই আবাসিক হোটেল আছে । হোটেল সম্পর্কে আমার ধারনা নেই
। আমি দিনে গিয়ে রাতেই ফিরতি বাসে উঠেছি ।
খাবার :
ঈশ্বরদীতে খাওয়ার মত অনেক হোটেল আছে । দাম ঢাকার মতই ।
এছাড়া আর কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে প্রশ্ন করবেন আমি যতটুকু
জানি সাহায্য করবো ।
অন্য কোন তথ্য এড করার থাকলে কমেন্ট করলে আমি এডিট করে নিবো ।
তাহলে আর দেরি কেন, ঘুরে আসুন লিচুর শহর ঈশ্বরদীতে । আর ১০ দিনের
মত লিচু থাকবে । এরপর সব বাগান ফাঁকা হয়ে যাবে ।
No comments:
Post a Comment