Thursday, July 7, 2016

মাদারীপুর ভ্রমণ তথ্য
                                               এবার আসুন জানি মাদারীপুর সম্পর্কে। 

দর্শনীয় স্থান সমুহ
শকুনীলেকঃ মাদারীপুর শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত শকুনীলেক এ জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় জলাধার। ১৯৪৩ সালে এ লেক খনন করা হয়। এ লেকের আয়তন প্রায় ২০ একর। লেকের উত্তর পাড় ঘিরে রয়েছে পুরাতন কালেক্টরেট ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, শহীদ স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার এবং দক্ষিণ পাড়ে সার্কিট হাউস ও মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন। লেকের পূর্বপাড়ে রয়েছে জেলা কারাগার ও মাদারীপুর সদর হাসপাতাল এবং পশ্চিম পাড়ে ডিসি একাডেমী ও জেলা সদর জামে মসজিদ।
                                     কোথায় ঘুরবেন?

হযরত শাহ মাদারের দরগাহঃ আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর ঘেঁষে মাদারীপুর শহরের একপ্রান্তে হযরত শাহ মাদারের দরগাহ অবস্থিত। কে এই দরগাহ নির্মাণ করেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। দরগাহের সাথে বর্তমানে একটি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে।মাদারিপুর সদর থানা থেকে রিক্সা নিয়ে যেতে হবে।

আলগী কাজি বাড়ি মসজিদঃ মাদারীপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন মসজিদ আলগী কাজি বাড়ি মসজিদ। মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে আলগী গ্রামে এর অবস্থান। আজ থেকে প্রায় তিনশত বছর পূর্বে আলগী দিঘির পাড়ে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। অনেকের ধারণা আরব দেশ থেকে আগত কোন এক দ্বীন প্রচারক দরবেশ বা আওলিয়া এটি নির্মাণ করেন।


রাজা রাম মন্দিরঃ রাজারাম মন্দির মাদারীপুর জেলার প্রাচীনতম মন্দির। এ মন্দিরটি জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া গ্রামে অবস্থিত। খালিয়ার বিশিষ্ট হিন্দু জমিদার রাজারাম রায় সপ্তদশ শতাব্দিতে এটি নির্মাণ করেন। এ মন্দিরের সম্মুখভাগ টেরা কোটা কারুকার্য মন্ডিত এবং রামায়ণ-মহাভারতের দৃশ্যাবলী খচিত।কিভাবে যাবেন জানতে নিচে খালিয়া অংশ পরুন।

ঝাউদি গিরিঃ মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদিতে অবস্থিত এ গিরিকে এ জেলার সবচেয়ে প্রাচীন প্রত্নসম্পদ বলে ধারণা করা হয় । ব্রিটিশ যুগের বহু পূর্বে এটি নির্মিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে মঘ বংশের লোকেরা ইহা নির্মাণ করে। বিশ ইঞ্চি ইট-সুড়কি গাথুনির ওপর একশত ফুটের অধিক উঁচু এ গিরিটির উল্লেখ আর এস ও সি.এস ম্যাপে এর অবস্থান থাকায় জরীপ কাজে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাচীন মঘ বংশীয় লোকেরা কি কারণে এটি নির্মাণ করেন তা জানা যায়নি।যাবার উপায়: মাদারীপুর শহর থেকে টিবি হাসপাতাল হয়ে সোজা দক্ষিন দিকে। ঝাউদী ইউনিয়নে এটি অবস্থিত।


আউলিয়াপুর নীলকুঠিঃ আউলিয়াপুর নীলকুঠি এ জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের আওলিয়াপুর গ্রামে এ নীলকুঠি অবস্থিত। অত্যাচারী ইংরেজ নীলকর ডানলপ ছিলেন এ কুঠির অধিকর্তা। এ কুঠির অদূরে ফরায়েজী আন্দোলনে নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর অনুসারীদের সাথে নীলকর ডানলপ বাহিনীর যুদ্ধ বাধে। সে যুদ্ধে ডানলপের বাহিনী চরম পরাজয় বরণ করে। ঐ স্থানটি রণখোলা নামে পরিচিত।
যাবার উপায়: মাদারীপুর শহর হয়ে কাজীর টেক ফেরিঘাট পার হয়ে ছিলারচর বাজারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে লোকজন দেখিয়ে দেবে।
থাকার ব্যবস্থা: সেখানে থাকার কোন সু-ব্যবস্থা নেই। মাদারীপুর শহরে আবাসিক হোটেলে থাকতে হবে।



মিঠাপুর জমিদার বাড়িঃ মাদারীপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মিঠাপুর জমিদার বাড়ি । মুসলমান জমিদার গোলাম মাওলা চৌধুরী ও গোলাম ছত্তার চৌধুরী এবং তাদের বংশধর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর জি.ডাব্লু চৌধুরীর বাড়ী হচ্ছে এ জমিদার বাড়ী । হিন্দু জমিদার লক্ষ্মী নারায়ন সিকারের বাসস্থানও মিঠাপুরে। তাদের নির্মিত দালান-কোঠা এখানে এখনও বিদ্যমান। এগুলো এ জেলার অন্যতম প্রত্নসম্পদ। মাদারীপুর সদর থেকে অটো রিকশা দিয়ে মিঠাপুর যেতে হবে।

প্রণব মঠ, বাজিতপুরঃ রাজৈর উপজেলার বাজিতপুরে ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের পাশে প্রণবমঠ অবস্থিত । প্রণবস্বামী প্রণবানন্দ মহারাজের নাম অনুসারে এ প্রণব মঠ। এখানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি আশ্রম আছে। স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ ছিলেন অগ্নিযুগের একজন বিশিষ্ট বিপ্লবী এবং বীর সাধক। মঠটি বেশ প্রাচীন।
মঠের বাজার মঠ, খোয়াজপুরঃ অন্যতম একটি প্রাচীন মঠ। মঠ এলাকায় বাজার গড়ে ওঠায় এর নাম হয়েছে মঠের বাজার। ধনীরাম মাঝির পুত্র ডেংকর মাঝি এটি নির্মাণ করেন।সদর থেকে টেকেরহাটের বাসে সাধুর ব্রীজ নামতে হবে। সেখান থেকে একটু ভেতরে ভ্যান বা হেটে যাওয়া যায়।

খালিয়া শান্তিকেন্দ্রঃ ঢাকা থেকে ২৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নে শান্তিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত। এই ক্যাম্পাসে ৩ টি পুকুর, ফলের বাগান এবং একটি পুরানো মন্দির রয়েছে। শান্তিকেন্দ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা। যা যা দেখবেনঃ  কুমার পল্লী, রাজারাম মন্দির, ঐতিহ্যবাহী খালিয়া রাজা রাম ইনষ্টিটিউশন(বয়স ১১১+ বছর)
যাবার উপায়: মাদারীপুরের টেকের হাট বাস স্টান্ডে নেমে ভ্যানে অথবা টেম্পুতে করে টেকেরহাট থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে একটু ভিতরে এগুলেই খালিয়া শান্তিকেন্দ্র।
থাকার ব্যবস্থা: সেখানে থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
পিকনিকের জন্য মনোরম পরিবেশ। রান্না-বান্নার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।


পর্বতের বাগানঃ (বিলুপ্ত প্রায়, এখন আর তেমন কেউ যায় না) মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নে কুমার নদীর দক্ষিণ তীর ঘেঁষে পর্বতের বাগান অবস্থিত। পর্বতের বাগান এ জেলার অন্যতম পিকনিক স্পট। ষাট বছর আগে ২৬ একর জমিতে রাস বিহারী পর্বত এ বাগানটি গড়ে তোলেন। শত শত প্রজাতির গাছপালা, পুকুর-দিঘি ও অতিথি পাখির কলকাকলিতে একসময় প্রাণবন্ত ছিল এ বাগান।মস্তফাপুর(মস্তাপুর) বড় ব্রীজ এর আগের বামের রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে হবে।

সেনাপতির দিঘিঃ কালকিনি উপজেলার আমড়াতলা ও খাতিয়াল গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে এ দিঘি অবস্থিত। এ দিঘির আয়তন ২৫ একর। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসন আমলে সুবাদার ইসলাম খাঁর নেতৃত্বে সৈন্যের বিশাল এক বাহিনী ঢাকা যাওয়ার সময় এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। তারা তাদের পানিয় জলের অভাব মেটানোর জন্য এ দিঘি খনন করে।
যাবার উপায়: মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল থেকে দক্ষিন দিকে গগনপুর বাজার গিয়ে পশ্চিম দিকে রাস্তা দিয়ে সোজা রাস্তার মাথায়।
থাকার ব্যবস্থা: সেখানে কোন থাকার ব্যবস্থা নেই। মাদারীপুর শহরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে।

মাদারীপুর স্পিনিং মিলস: মাদারীপুরে যে ক'টি শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে এগুলোর মধ্যে  মাদারীপুর স্পিনিং মিলস এর অবদান সবচেয়ে বেশি। এ মিলটি ১৯৮৬ সালে ২৯.১৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এর জনবল ২০০০ জন। এ মিলে বার্ষিক ৫০০০ মে. টন সূতা উৎপাদিত হয় যার আর্থিক মূল্য ৬০ কোটি টাকা।
ভিতরের পরিবেশ অত্যন্ত মনরম। গেস্ট থাকার জন্য ভিতরে দো-তলা গেস্ট হাউজ রয়েছে। পিকনিকের জন্য রয়েছে সু-ব্যবস্থা।

যাবার উপায়: ঘটকচর স্কুলের সামনে নেমে হেটে অথবা রিক্সা/ভ্যান যোগে যাওয়া যাবে। 




চরমুগরিয়া ( প্রাচীন বন্দর ও বানরের রাজ্য) ঃ এক সময় বিখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল সদর উপজেলার চরমুগরিয়া । ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ছিল এ বন্দর। চরমুগরিয়ার সেই ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। অতীতের নীরব সাক্ষী দাঁড়িয়ে আছে এ বন্দর।
চরমুগুরিয়ার বিশেষত্ব হলো এখানকার বানর । মানুষের বসতির পুর্বেই এখানে তাদের বসবাস । পুরো চরমুগুরিয়া জুড়ে মানুষের সাথে এদের সমাজ, এদের বসবাস ।
সরকারী তত্ত্বাবধান এর অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই স্থানের বানর হারিয়ে যাচ্ছে।  ছবি আছে কিছু।

তাছাড়া, লঞ্চ ঘাট, ফেরী ঘাট ও সার্বিক হোটেল আছে।  মাদারীপুরের রসগোল্লা, রস মালাই ও ছানার জেলাপি অনেক নাম করা।  উল্লেখ্য রস গোল্লা ও ছানার জেলাপি পুরাতন কোর্ট এর মোড়ের দোকান গুলোতে ভাল বানায়, পুরান বাজারের খগেনের রস মালাই এবং যাদবের দই ও ঘি ভাল। মাদারীপুরের খেজুরের গুড় এর সুনাম অনেক বেশি।ছানার জেলাপি আমি নাদারিপুরের বাইরে আজ পর্যন্ত কোথাও দেখিনি।
পুরান বাজারের পাশে আছে একটা মন্দির। কাঠপট্টির পাশে আছে একটা বিশাল ব্রীজ, বিকেলে এখানে অনেকেই আসেন প্রাকৃতিক বাতাসে নিজেকে জুড়াতে।
হাজী শরিয়ত উল্লাহ ব্রীজ (যা প্রজেক্ট নামে বেশী চিনে) অসাধারন একটি জায়গা। যেতে হবে ঝামেলা করে, কারন এখানে যেতে হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে যেতে হবে।
এছারা শকুনী লেকে গোসল করা বা নদীতে গোসল করার সুযোগ তো আছেই। চাইলে রাতের বেলা নদীতে নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যায়।

নামকরা পতিতালয় টা ভেঙ্গে ফেলার কারনে আপাতত সেটা দেখার সুযোগ নেই। খুব সুনামছিল(!) ।
টিভি তে অনেক বার এটা নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে।

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে গাবতলি বা কেরানীগঞ্জ(নয়া বাজারের ব্রীজের ওপারে) থেকে মাদারীপুর এর সরাসরি বাস পাওয়া যায়। গাবতলি থেকে বরিশাল গামী যে কোন বাসে মস্তফাপুর নেমে বাস বা অটো রিক্সায় করে মাদারীপুর সদরে আসা যায়।
ভারাঃ কেরানীগঞ্জ থেকে সার্বিক বাসে মাদারীপুর সদরের ভাড়া ২০০ টাকা জন প্রতি (নরমাল ২/৩ সিটের), ২৫০ টাকা জন প্রতি  (চেয়ার)। সকাল ৫ টা থেকে ৩০ মিনিট পর পর বাস পাওয়া যায়।এছারাও সায়দাবাদ থেকে সোনালি বাস ও কেরানীগঞ্জ থেকে চন্দ্রা বাস ও একি রুটে চলে। ভাড়া সার্বিকের চেয়ে সামান্য কম। এই বাস গুলো মাওয়া ঘাটে নামিয়ে দিবে এবং তাদের খরচে লঞ্চে করে নদী পার করে কাওরাকান্দি এনে আবার তাদেরই আরেকটা বাসে তুলে দিবে। ভাঙ্গা হয়ে এটা মাদারীপুর যাবে। আপনাকে অতিরিক্ত কোন ভাড়া দিতে হবে না।মাদারীপুর যেতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।

গাবতলি থেকে সার্বিক, চন্দ্রা, সুবর্ণ বাস চলে। সার্বিকই ভাল। চেয়ারে ৩০০ টাকা শুনেছি। আমি এই রূট দিয়ে যাইনা, সময় বেশী, ভাড়া বেশী, তবে নদীর পথ অনেক কম। মাত্র ৩০ মিনিট। যারা নদী ভয় পান তারা এদিক দিয়ে যেতে পারেন। এটা গাবতলি থেকে আরিচা গিয়ে নামাবে এবং নদী পার করে দৌলতদিয়া ঘাটে আবার তাদের বাসে তুলে দিবে। এটা ফরিদপুর সদর হয়ে মাদারীপুর যাবে।

আরেকটা উপায়ে যাওয়া যায়, ভেঙ্গে ভেঙ্গে। গুলিস্তান থেকে মাওয়ার বাসে ৭০ টাকা ভাড়া। সী বোটে নদী পার হতে পারেন ২০০ টাকা ভাড়া। ওপার থেকে মাদারিপুরের বাসে যাওয়া যায়। অথবা ভাঙ্গার বাসে ভাঙ্গা এসে সেখান থেকে মাদারীপুর।

থাকার ব্যাবস্থাঃ মাদারীপুরে থাকার জন্য ভাল মানের হোটেল হচ্ছে হোটেল সার্বিক। মন্ত্রীর বাসার পাশেই এই হোটেলের অবস্থান। হোটেল মাতৃভূমি আছে, যা পুরাতন বাসস্টান্ড এর পাশেই অবস্থিত।সার্বিক হোটেলে সিঙ্গেল থেকে শুরু করে স্যুটও ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়া বিষয়ে জানতে আমাকে খোচা মারুন।

এছারা আরেকটু কমে থাকতে চাইলে হোটেল সুমন, হোটেল সৈকত আছে বাদামতলায়। পুরান বাজারে আরও কিছু হোটেল আছে কমের মধ্যে।

সামনে ৩ দিনের একটা ভ্রমন প্ল্যান ও কোথায় কত খরচ হবে সব জানিয়ে একটা লেখা দেয়ার চেষ্টা করব। যাতে করে একাই আপনি গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। আর ট্যুর গ্রুপ বিডি এর সাথে গেলে তো আর সহজ হয়ে যাবে।


No comments:

Post a Comment